শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ: বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে সারা দেশে ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। এই ঘর নির্মাণের খরচের নামে গৃহহীন পরিবারের কাছ থেকে নেয়া টাকা ফেরত দেন সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এলাছ মিয়া। অন্যদিকে রংপুরের মিঠাপুকুরে এক অন্ধ ভিক্ষুকের শেষ সম্বল একটি গরু ও ভিক্ষার সঞ্চিত ২৫ হাজার টাকা দিয়েও মুজিব শতবর্ষের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুর্ণবাসনের বর্তমান তালিকায় নাম ওঠেনি এ পরিবারের। স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) আব্দুল জলিল মিয়ার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন উপজেলার শাল্টি গোপালপুর ইউনিয়নের মরিচবাড়ি গ্রামের ভিক্ষুক অন্ধ এনদা মিয়া।
এ বিষয়ে ভিক্ষুক এনদা মিয়া (৩০) স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘মুই তো ভিক্ষুক, ভিক্ষে করি খাঁও। অন্যের জমিতে থাকো। ভিক্ষা করি একটা গরু কিনছিনু, জলিল মেম্বার সরকারের কাছ থাকি ঘর নিয়ে দিবের কথা কয়া সেই গরুটেও নিয়ে গেইচে। মুই তো চোখে দেকো না। মোর মায়ের কাছ থাকিও ২৫ হাজার টাকা নেছে। হামাক ঘর তো দিল নে, হামার গরুটেও নিয়ে গেলো টাকাও নিলো। মুই এর বিচার চাও।’
অভিযোগ রয়েছে, একই গ্রামের কিছু প্রতিবন্ধী ও ছিন্নমূল মানুষের কাছ থেকে গরু-ছাগল ও নগদ টাকা নিয়ে মুজিব শতবর্ষের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুর্ণবাসনের প্রকল্পের ঘর দেবার কথা বলে তাদেরকেও ঘর দেন নি ওই ইউপি মেম্বার।
ওই গ্রামের রসিদা বেগম জানান, সরকারের কাছ থেকে ঘর নিয়ে দেয়ার কথা বলে জলিল মেম্বার তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। তিনি ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। বাকি টাকা দিতে না পারায় মেম্বার ইট-বালু নিয়ে যায়।
একই এলাকার দুদু মিয়া জানান, সরকারের বরাদ্দকৃত ঘর দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকেও ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন জলিল মেম্বার। আমাকে ঘর তো পেলাম না, টাকাও দিলোনা। টাকা চাইতে গেলে উল্টো গালিগালাজ করেন।
মানুষদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সরকারের বরাদ্দকৃত ঘর না দেয়ার বিষয়ে শাল্টি গোপালপুর ইউপি সদস্য (মেম্বার) জলিল মিয়া বলেন, আমি কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি। আমাকে ফাঁসানোর জন্য আমার প্রতিপক্ষ চক্রান্ত করছে। ‘আমি শুনেছি আওয়ামী লীগের শামীম নামের একজন টাকা নিয়েছে ওই অন্ধের কাছ থেকে। তবে আমি টাকা নেই নাই।
এ বিষয়ে শামীমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি কী এলাকার মেম্বার, যে মানুষ আমাকে টাকা দেবে? মেম্বারের সাথে আমার বিরোধ থাকার কারণে মেম্বার আমাকে জড়াতে চায়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, গৃহহীন মানুষগুলো স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য আবাসন প্রকল্পের একটি করে ঘর পাচ্ছেন। আর এ ব্যাপারে কেউ নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে সারা দেশে ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। এসব ঘর বরাদ্দ ও নির্মাণে অনিয়ম সামনে আসছে।
দেশে ৬৬ হাজার ১৮৯ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর বরাদ্দের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছিলেন সিলেটের জৈন্তাপুরের চিকনাগুল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পশ্চিম ঠাকুরের মাঠি গ্রামের বশির উদ্দিন। তার নিজস্ব জমি ও ঘর থাকায় বরাদ্দ পাওয়া ঘরটি স্থানীয় এমপি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের কাছে ফিরিয়ে দেন।
অন্যদিকে বরগুনা উপজেলার তালতলীতে গৃহহীন মৃত রাজেস্বরের স্ত্রী বৃদ্ধা উরমিলা (৬৫) ঘর বরাদ্দ পেলেও ঘরের কাজ নিম্নমানের হওয়ায় দেয়াল ভেঙে পরে।